সুদানের চলমান গৃহযুদ্ধ: এক মহাবিপর্যয়কর সংঘাত

সুদান বর্তমানে এক ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধের আগুনে পুড়ছে, যা জাতিসংঘ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে। ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে Sudanese Armed Forces (SAF), যার নেতৃত্বে রয়েছেন জেনারেল Abdel Fattah al-Burhan, এবং আধাসামরিক বাহিনী Rapid Support Forces (RSF), যার কমান্ডে রয়েছেন Mohamed Hamdan Dagalo (যিনি “Hemedti” নামে পরিচিত),—এই দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইতোমধ্যে কয়েক দশ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই যুদ্ধ সুদানের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী—২৪.৬ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যার মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষাধিক মানুষ চরম অনাহারে ভুগছে—এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি।

রক্তাক্ত উম্মাহবিশেষ প্রবন্ধবিশ্ব

Abdur Sami

10/30/20251 min read

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: দশকের পর দশক অস্থিতিশীলতা

সুদানের বর্তমান সংকটের শিকড় বহু দশকের সংঘাত ও স্বৈরশাসনের ইতিহাসে প্রোথিত। ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে দেশটি ক্রমাগত রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে গেছে—২০টি সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা, দীর্ঘ সামরিক একনায়কতন্ত্র, এবং দুটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ এই ইতিহাসের অংশ।

গৃহযুদ্ধ ও বিভাজন

প্রথম সুদানি গৃহযুদ্ধ (১৯৫৫–১৯৭২) স্বাধীনতার আগেই শুরু হয়, যখন আরব-মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে খ্রিস্টান ও ঐতিহ্যিক ধর্মবিশ্বাসী দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক বৈষম্য ও সম্পদ বণ্টন নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এই যুদ্ধে প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়, পরে ১৯৭২ সালের Addis Ababa চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলকে আংশিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়।

কিন্তু শান্তি বেশিদিন টেকেনি। ১৯৮৩ সালে প্রেসিডেন্ট Gaafar Nimeiri দক্ষিণের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে পুরো দেশে ইসলামিক শরিয়া আইন প্রয়োগ করেন। এর ফলে শুরু হয় দ্বিতীয় সুদানি গৃহযুদ্ধ (১৯৮৩–২০০৫), যা ২২ বছর স্থায়ী হয়। John Garang-এর নেতৃত্বে Sudan People’s Liberation Army এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়। এতে দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ নিহত হয় এবং চার মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত হয়। অবশেষে ২০০৫ সালের Comprehensive Peace Agreement দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার পথ তৈরি করে, যা ২০১১ সালে বাস্তবায়িত হয়—এর ফলে সুদান তাদের অধিকাংশ তেলসম্পদ হারায়।

Bashir-এর একনায়কতন্ত্র ও দারফুর গণহত্যা

Omar al-Bashir ১৯৮৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং প্রায় ৩০ বছর কঠোর দমননীতি ও ইসলামিক শাসনের মাধ্যমে সুদান শাসন করেন। তাঁর শাসনামলে ২০০৩ সালে দারফুর অঞ্চলে সংঘর্ষ শুরু হয়, যেখানে সরকার-সমর্থিত Janjaweed মিলিশিয়ারা—মূলত আরব যোদ্ধারা—অ-আরব জনগোষ্ঠী যেমন Fur, Zaghawa, ও Masalit-এর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায়। প্রথম কয়েক বছরেই প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ নিহত হয়।

২০১৩ সালে এই Janjaweed বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনর্গঠন করে Rapid Support Forces (RSF) নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন Hemedti। তারা Bashir-এর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী হিসেবে কাজ করত এবং দেশের স্বর্ণখনির উপর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করে।

২০১৯ সালের বিপ্লব ও ব্যর্থ রূপান্তর

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জ্বালানি ঘাটতি, অর্থনৈতিক পতন এবং রুটির মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলন দ্রুত Bashir-এর পতনের দাবিতে রূপ নেয়। ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল SAF ও RSF যৌথভাবে তাকে উৎখাত করে।

২০১৯ সালের আগস্টে একটি ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তির মাধ্যমে বেসামরিক শাসনে রূপান্তরের জন্য একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। ৩৯ মাসের মধ্যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন করার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। এতে ১১ সদস্যবিশিষ্ট Sovereignty Council গঠিত হয়—যার অর্ধেক সামরিক ও অর্ধেক বেসামরিক প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত—এবং Abdalla Hamdok-কে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবরে Burhan ও Hemedti পুনরায় অভ্যুত্থান ঘটিয়ে Hamdok-কে আটক করেন এবং বেসামরিক সরকার ভেঙে দেন।

কীভাবে বর্তমান যুদ্ধের সূচনা হলো

Burhan ও Hemedti-র মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছিল _RSF_-কে _SAF_-এর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা নিয়ে। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দুই জেনারেল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে একটি কাঠামোগত চুক্তিতে সম্মত হন, যার লক্ষ্য ছিল বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং _RSF_-কে নিয়মিত সেনাবাহিনীর অংশ করা।

কিন্তু SAF চাইছিল দুই বছরের মধ্যে এই একীভূতকরণ সম্পন্ন করতে, যা কার্যত RSF বিলুপ্ত করবে এবং Hemedti-কে Burhan-এর অধীনে আনবে। অন্যদিকে RSF দাবি করেছিল দশ বছরের ধীর প্রক্রিয়া—যাতে তারা তাদের স্বায়ত্তশাসন ও বিশাল অর্থনৈতিক স্বার্থ (বিশেষত স্বর্ণখনি ব্যবসা) ধরে রাখতে পারে।

২০২৩ সালের এপ্রিল নাগাদ যখন চূড়ান্ত চুক্তির সময়সীমা ঘনিয়ে আসে, অবিশ্বাসের পারস্পরিক আগুন জ্বলে ওঠে। ১৫ এপ্রিল RSF সারা দেশে, বিশেষত খার্তুম ও দারফুরে, বাহিনী মোতায়েন করে। SAF পাল্টা আক্রমণ চালায়—এভাবেই পুরো দেশ জুড়ে পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি (অক্টোবর ২০২৫)

যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র

প্রায় দুই বছরের যুদ্ধ শেষে এখন সংঘর্ষ একটি কৌশলগত অচলাবস্থায় পৌঁছেছে—কিছু এলাকায় SAF, কিছু এলাকায় RSF নিয়ন্ত্রণ করছে।

  • SAF ২০২৫ সালের মার্চ নাগাদ খার্তুমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তারা Republican Palace, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো পুনর্দখল করেছে এবং Sennar ও Gezira রাজ্যগুলিও পুনরুদ্ধার করেছে। সরকার এখন রেড সাগর উপকূলের Port Sudan থেকে পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে Burhan-এর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রশাসন কার্যকর।

  • RSF এখনো দারফুরের অধিকাংশ অঞ্চল ও Kordofan-এর কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ২০২৫ সালের জুনে তারা লিবিয়া ও মিশরের সীমান্তবর্তী এলাকা দখল করে এবং ২০২৫ সালের এপ্রিলে “Government of Peace and Unity” নামে এক সমান্তরাল প্রশাসন ঘোষণা করে।

  • সবচেয়ে তীব্র যুদ্ধ চলছে El Fasher শহর নিয়ে—দারফুরের শেষ বড় নগরী যেটি এখনো RSF পুরোপুরি দখল করতে পারেনি। শহরটি ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ; RSF এর ড্রোন হামলা ও গোলাবর্ষণে শত শত বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

অক্টোবর ২০২৫-এর শেষ সপ্তাহে RSF দাবি করে তারা El Fasher-এ _SAF_-এর 6th Infantry Division বেস দখল করেছে, যদিও সামরিক সূত্র জানায় সেনারা শহরের ভেতরেই অবস্থান পরিবর্তন করেছে। ১৫–১৯ অক্টোবরের লড়াইয়ে অন্তত ১,৫০০ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়।

মানবিক বিপর্যয়

এ যুদ্ধ এখন এক বিশাল মানবিক ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে।

  • প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত—এর মধ্যে ১ কোটি দেশের ভেতরে এবং ৪ লক্ষ বিদেশে আশ্রয় নিয়েছে; এটি বিশ্বের বৃহত্তম স্থানচ্যুতি সংকট।

  • ২৪.৬ মিলিয়ন মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে—দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী।

  • অন্তত ১০ টি এলাকায় দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত, যার মধ্যে Zamzam শরণার্থী শিবিরে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ আশ্রিত; আরও ১৭ টি অঞ্চল উচ্চ ঝুঁকিতে।

  • ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৫ লক্ষ ২২ হাজার শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে বলে অনুমান।

  • কলেরা, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, কারণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।

অত্যাচার ও গণহত্যা

বিশেষ করে দারফুরে RSF ও তাদের মিত্র মিলিশিয়ারা ধারাবাহিকভাবে জাতিগত নিধন, ধর্ষণ, নির্যাতন, ও লুটপাট চালাচ্ছে।

  • পশ্চিম দারফুরের El Geneina অঞ্চলে ২০২৩ সালের এপ্রিল–নভেম্বরের মধ্যে Masalit ও অন্যান্য অ-আরব জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত পরিষ্কার অভিযানে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং ৫ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী Chad-এ পালিয়ে যায়।

  • ২০২৩ সালের নভেম্বরের Ardamata massacre-এ অন্তত ১,০০০ Masalit পুরুষ ও ছেলে হত‌্যাহত হয়।

  • ২০২৪ সালের অক্টোবরে পূর্ব Gezira State-এ সংঘটিত গণহত্যায় অন্তত ৩০০ জন মারা যায়।

  • _RSF_-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ধর্ষণ, নির্যাতন ও লুটপাটের অগণিত ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে যে RSF ও তাদের মিত্ররা গণহত্যা ঘটিয়েছে। Human Rights Watch ও অন্য সংগঠনগুলো RSF নেতৃত্বের উদ্দেশ্য তদন্তের আহ্বান জানায়—তারা Masalit ও অন্য অ-আরব গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে ধ্বংস করতে চায় কি না তা নির্ধারণের জন্য।

বহিরাগত মিত্রতা: কে কাকে সমর্থন করছে

সুদানের গৃহযুদ্ধ এখন আর কেবল দেশীয় সংঘাত নয়—এটি এক আন্তর্জাতিকভাবে জটিল যুদ্ধে রূপ নিয়েছে, যেখানে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি অস্ত্র, ড্রোন ও অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে।

RSF-এর পৃষ্ঠপোষকরা

  • United Arab Emirates (UAE) _RSF_-এর সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী মিত্র হিসেবে UAE-র নাম সামনে এসেছে—যদিও তারা প্রকাশ্যে অস্বীকার করেছে। _RSF_-এর হাতে চীনা নির্মিত AH-4 howitzer এবং GB50 guided bomb পাওয়া গেছে, যা চীন থেকে কেবলমাত্র UAE-ই কিনেছিল। এছাড়া RSF-এর আর্থিক লেনদেন ও স্বর্ণ পাচারের নেটওয়ার্কও UAE থেকেই পরিচালিত হয়। জাতিসংঘের তদন্তে দেখা গেছে, বুলগেরিয়া থেকে UAE-তে রপ্তানিকৃত অস্ত্র পরে RSF-এর সরবরাহ চেইনে পৌঁছেছে। ২০২৫ সালের মে মাসে সুদান আনুষ্ঠানিকভাবে UAE-এর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

  • Chad Chad RSF-এর জন্য অস্ত্র পরিবহনের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, বিশেষ করে Amdjarras বিমানবন্দর থেকে। এখানে RSF বাহিনী গোপনে ঘাঁটি স্থাপন করেছে।

  • Libya (General Khalifa Haftar) লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শাসক Haftar RSF-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তাঁর মিলিশিয়া দল RSF-কে অস্ত্র ও যোদ্ধা পাঠাচ্ছে।

SAF-এর সমর্থকরা

  • Egypt SAF-এর সবচেয়ে দৃঢ় মিত্র মিশর। তারা তুরস্কে তৈরি ড্রোন, প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা সহায়তা ও লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করছে। মিশর সুদানের স্থিতিশীলতাকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য মনে করে। যুদ্ধের শুরু থেকে প্রায় ৫ লক্ষ সুদানি শরণার্থী মিশরে আশ্রয় নিয়েছে।

  • Iran ইরান SAF-কে সামরিক সরঞ্জাম ও ড্রোন সরবরাহ করছে এবং Port Sudan-এ একটি নৌঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যা তাদের রেড সি অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে সহায়তা করবে।

  • Russia রাশিয়া SAF-কে অস্ত্র, গোয়েন্দা তথ্য এবং লজিস্টিক সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি খনিজ ও তেল চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। রাশিয়াও রেড সি উপকূলে একটি নৌঘাঁটি স্থাপন করতে চায়।

  • Turkey তুরস্ক SAF-কে ড্রোন ও মিসাইল সরবরাহ করছে এবং খনিজ ও বন্দর উন্নয়ন চুক্তি অর্জনের চেষ্টা করছে।

  • Ukraine যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেন SAF-কে সহায়তা করেছিল, কারণ Wagner Group তখন RSF-এর পক্ষে ছিল।

  • Eritrea, Saudi Arabia, Qatar এই তিন দেশ SAF-কে বিভিন্ন মাত্রায় সামরিক ও রাজনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে।

উভয় পক্ষই বিদেশি মিত্রদের সরবরাহকৃত উন্নতমানের ড্রোন ব্যবহার করছে, যার ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, হাসপাতাল, ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

শান্তি প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

২০২৩ সালের মে মাসে Jeddah Declaration সহ একাধিক যুদ্ধবিরতির চুক্তি হলেও কোনোটি স্থায়ী শান্তি আনতে পারেনি। Burhan দীর্ঘদিন ধরে বলেছিলেন, “যুদ্ধের ইতি টানার একমাত্র উপায় সামরিক বিজয়।” অবশেষে ২০২৫ সালের অক্টোবরে তিনি শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি হন, যদিও তাঁর কঠোর অবস্থান আলোচনাকে অনিশ্চিত করেছে।

অন্যদিকে উভয় পক্ষই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি বা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৫ সালের মানবিক সহায়তা পরিকল্পনায় ৪.২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন থাকলেও মাত্র ২৩% অর্থ সংগ্রহ হয়েছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ দারফুর ছাড়া গোটা সুদানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে, যদিও উভয় পক্ষই বিদেশ থেকে অস্ত্র পাচ্ছে। ফলে যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে, মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

সুদান এখন পূর্ণ রাষ্ট্রব্যর্থতার পথে এগোচ্ছে। যদি দ্রুত কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ও মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত না হয়, তাহলে দেশটি আফ্রিকার কেন্দ্র থেকে রেড সি পর্যন্ত এক অরাজক অঞ্চলে পরিণত হতে পারে। এই সংকট কেবল একটি গৃহযুদ্ধ নয়—এটি একটি আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে অভিবাসন, সন্ত্রাসবাদ, বৈশ্বিক বাণিজ্য পথ এবং মানবিক নীতির ওপর।

উপসংহার

সুদানের গৃহযুদ্ধ বিশ্বের সামনে এক নির্মম বাস্তবতা উন্মোচন করেছে—যখন ক্ষমতা, সম্পদ ও বিদেশি স্বার্থ মিলেমিশে একটি জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। মিলিয়ন মানুষের দুর্ভোগ এখন আন্তর্জাতিক উদাসীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। যদি বিশ্ব এখনই একত্রে পদক্ষেপ না নেয়, তবে সুদানের পতন কেবল আফ্রিকার নয়, বৈশ্বিক মানবিক নীতিরও এক গভীর ব্যর্থতা হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবে।